ওয়েব ডেভলপমেন্টের জন্য সর্বাধিক ব্যবহৃত কোডগুলি তৈরির পর খুব সম্ভবত ২৫ বৎসর কেটে গেছে। ইন্টারনেটের উদ্ভব JavaScript এর অবস্থানটাকে এমনটি একটি পর্যায়ে নিয়ে গেছে যা কখনো কল্পনাও করা যায়নি। শুরু থেকেই JavaScript কেবল শক্তিশালী একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে এটাকে শক্তিশালী করে তোলেনি বরং এটা আধুনিক ওয়েব ডেভলপমেন্ট এর ক্ষেত্রে ব্যবহারের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি করেছে।
১৯৯৫ সালে স্কিম, জাভা এবং নিজের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে নেটস্কেপ কম্মুনিকেশনস এ কর্মরত থাকাকালীন ব্রেন্ডান আইস এই JavaScript তৈরি করেন। ১৯৯০ এর দশকে নেটস্কেপ কমিউনিকেশন এর ব্রাউজারকে ব্যবহারের মাধ্যমে ইন্টারনেটে তাদের এক বড় ধরনের উপস্থিতিকে কাজে লাগিয়েছিল – সেটা ছিল নেটস্কেপ নেভিগেটর, যা প্রথম মূলধারার ওয়েব ব্রাউজার মোজাইক ব্রাউজারের চাইতে বেশী গ্রহনযোগ্যতা লাভ করেছিল।
নেটস্কেপ কম্মুনিকেশনস এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মার্ক এ্যান্ড্রিসেন, যিনি ইলিয়নিস ইউনিভার্সিটির ডেভলপার টিমের একজন সদস্য ছিলেন, এই দলটি ১৯৯৩ সালে মোজাইক ব্রাউজার প্রজেক্ট এর উপর কাজ করেছিলেন। এই ওয়েবটি জনপ্রিয়তা লাভ করায়, কারিগরী কোম্পানীগুলি ইন্টারনেটে সবচেয়ে বেশী কার্য়করী ব্রাউজার ডেভলপ করার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে।
মাইক্রোসফট এই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে নেটস্কেপের কাছ থেকে ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের যুদ্ধে নেমে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার প্রযুক্তির প্রজেক্টটি তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর মধ্য দিয়ে ব্রাউজার শেয়ার মার্কেটে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে মাইক্রোসফট এবং নেটস্কেপের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করে।
কোন এক সময়ে ওয়েব ডেভলপারগণ প্রত্যাশা করলেন যে ওয়েব পেজ গুলোতে গতিশীল বৈশিষ্ট্য সংযোজন করার লক্ষ্যে কোন একটি সঞ্চালনী ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরি করা দরকার। প্রাথমিকভাবে তারা জাভা এর উপর তাদের লক্ষ্য স্থির করলেন কিন্তু কালক্রমে তারা এটাও উপলব্ধি করলেন যে ব্যাবহারকারীগনের সন্তুষ্টি লাভের জন্য এর চাইতেও নমনীয় কিছু একটা প্রয়োজন।
নেটস্কেপ বিষয়টি অনুধাবন করতে পারল এবং তারা হালকা একটি সঞ্চালনীমূলক ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরীর লক্ষ্য স্থির করলো যাতে করে তা ওয়েব পেজে পারস্পরিক ক্রিয়াশীল কায়ক্রমগুলিকে যুক্ত করতে ওয়েব ডেভলপারগনকে সক্ষম করে তোলে। এই সময়টা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়, আর এই সময়েই JavaScript এর জনক পরিচিতি লাভ করে থাকেন।
১৯৯৫ সালে নেটস্কেপ ব্রেনডান আইস এর সহিত যোগাযোগ করেন এবং তাদের নেটস্কেপ নেভিগেটর ২.০ ব্রাউজার রিলিজ করার জন্য তাকে সঞ্চালনীমূলক একটি ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরি এবং তার বাস্তবায়নের অনুরোধ করেন। যাই হোক, এটাকে তিনি তার বহুল প্রত্যাশিত কোন একটি বিষয়ের উপর কাজ করার সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন এবং নেটস্কেপের দলে যোগ দেন। আর এর মধ্য দিয়ে হালকা সঞ্চালনীমূলক একটি ল্যাংগুয়েজের জন্ম হয়। আইস এর নাম দিয়েছিল মোছা কিন্তু পরবর্তীতে এটাকে পূর্ণ নামকরন করে এর নাম দেন লাইভ স্ক্রিপ্ট। কেবল ১০ দিনের মধ্যেই আইচ কার্যকর একটি নমুনা তৈরি করে ফেলেন এবং সেটাকে নেটস্কেপ নেভিগেটর ২.০ বিটা ব্রাউজারে প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত করেন।
ব্রাউজার শেয়ার মার্কেটের আধিপত্যকে ধরে রাখার লক্ষ্যে নেটস্কেপ জাভা নামক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের ডেভলপার সান মাইক্রো সিস্টেমসের সহিত অংশীদারিত্ব গ্রহন করতে রাজি হয়। এর অর্থ এটাই দাঁড়ায় যে, সান মাইক্রোসিস্টেম ওয়েব ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নেটস্কেপ নেভিগেটর ব্যবহারকে নিশ্চিত করে যাতে করে জাভা ব্যবহারকারী সম্প্রদায়ের কাছে জাভা এর প্রাপ্যতা বজায় থাকে।f
১৯৯৬ সালে, প্রায় এক বছর পর, জাভা কমিউনিটির কাছে গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখার ব্যবসায়িক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে লাইভস্ক্রিপটকে শেষ পর্য়ন্ত JavaScript হিসেবে পূন:নামকরন করা হয়। নেটস্কেপ নেভিগেটর এর নেভিগেটর টু ব্রাউজার তৃণমূল পর্য়ায়ে কম্পিউটার ব্যাবহারকারীগনের জন্য সঞ্চালনমূলক ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। অন্যদিকে জাভা কে মনমুগ্ধকর ওয়েবের চাহিদার সমাধান হিসেবে বিশেষায়িত টুল হিসেবে গণ্য করা হয়।
এরপর, মাইক্রোসফট তাদের ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ৩ এর জন্য JavaScript কে নিজেদের মতো করে কারিগরী দিকে থেকে উন্নয়ন করেন। জাভা ব্রান্ডের মালিক সান মাইক্রোসিস্টেমের সহিত আইনি জটিলতা এড়ানোর লক্ষ্যে তারা এটার নাম দিয়েছিল Jscript এবং এটাকে Netscape এর অধীনে নিবন্ধনভূক্ত করা হয়।
পরিপাটি, স্থিতিস্থাপক এবং নন-ডেভলপারগণের জন্য হাতের নাগালের মধ্যের এই JavaScript (এবং JScript) ওয়েব পেজগুলিকে আর পারস্পরিক ক্রিয়াশীল এবং গতিময় করার মধ্য দিয়ে সেগুলি হয়ে উঠেছিল অনেক বেশী জনপ্রিয়।
দুর্ভাগ্যক্রমে অনুপ্রবেশের দিক দিয়ে দুর্বল সুরক্ষা ব্যবস্থার কারণে তারা উভয়েই নেতিবাচঁক সুনাম অর্জন করতে শুরু করেছিল, এর অর্থ হচ্ছে, মানুষ সামান্য কিংবা একেবারে জ্ঞান না থাকলেও তারা এগুলোতে সহজেই প্রবেশ করতে পারতেন। এছাড়াও, JavaScript ব্যবহারকারীগণকে সন্তুষ্টিদানের পরিবর্তে বরং তা মানুষকে জ্বালাতন করে ছাড়ত (যেমন- পপ-আপ এ্যাড, ব্রাউজার স্নিফিং ইত্যাদি)।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য ECMA মানদন্ড হিসেবে এর একটি সুনির্দিষ্ট সমাধান চলে আসে। নেটস্কেপ ও সান মাইক্রোসিস্টেমস্ ECMA ইন্টারন্যাশনালের কাছে নথি-পত্র উপস্থাপন করেন, যারা এই মানদন্ডটাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকবেন। মানোন্নয়নটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং এমনি একটি নতুন ল্যাংগুয়েজের জন্য এটা ছিল এক উদাক্ত আহবান।
এটা JavaScript কে আরো বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারীগণের কাছে উন্মুক্ত করে দেয় এবং সঞ্চালনীমূলক ল্যাংগুয়েজের উন্নয়নের ক্ষেত্রে ডেভলপারগণের কাছে এক সাড়া ফেলে দেয়। এই মানোন্নয়নটি সেই সকল নেতিবাচঁক মানুষকে দূরে সরে রাখতে সহায়তা করে যারা এই কোডটিকে নেতিবাচঁক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতেন। সানের জাভা ট্রেডমার্ককে জালিয়াতির হাত থেকে রক্ষার্থে এই ECMA কমিটি এই মানোন্নত ল্যাংগুয়েজকে ECMAScript নামে নামকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।
এতে করে আরো বেশী ভূল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়, কিন্তু শেষ পর্য়ন্ত ECMAScript কে নমুনা হিসেবে তুলে ধরা হলো এবং JavaScript সঞ্চালনী ল্যাংগুয়েজ হিসেবে অভিহিত হতে লাগল (যেমনটা এখনও হয়ে থাকে)।